মার্চ ৩, ২০২০
গাছে গাছে আমের মুকুল আশা বাড়ছে চাষিদের
আলী মুক্তাদা হৃদয় : বসন্তের আগমনের সাথে সাথে সাতক্ষীরা জেলার আম গাছগুলো মুকুলে ছেয়ে গেছে। জেলার প্রতিটি গ্রামে আমের মুকুলের মিষ্টি ঘ্রাণে মৌ মৌ সুবাস ছড়াচ্ছে বাতাসে। প্রকৃতি যেন ভিন্নরূপে সাজতে শুরু করেছে। মৌমাছি গুন গুন শব্দে ফাগুনের হাওয়ায় নতুন সুর তুলেছে। সাতক্ষীরা জেলার আম রপ্তানির মাধ্যমে সম্ভাবনাময় অর্থনীতির সাড়া দিচ্ছে। এ বছর জেলায় আমের মুকুল ভাল হওয়ায় ভাল ফলন পাবেন বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। জেলায় বিভিন্ন জাতের সর্বমোট ৫ হাজার ২শ’ ৪৭ টি আম বাগানে চাষিরাও আমগাছ পরিচর্যার ক্ষেত্রে বেশ যতœবান হচ্ছে। কলারোয়া উপজেলার চন্দনপুর এলাকার আম চাষি আবতাব আহম্মেদ জানান, আবহাওয়া অনুক‚লে থাকলে এবার আমের বাম্পার ফলন আশা করছি। আমার বাগানে অধিকাংশ গাছে এবার ব্যাপক হারে মুকুল এসেছে। পার্শ্ববর্তী বাগান গুলোতে ভাল মুকুল লক্ষ করা যাচ্ছে’। অধিকাংশ আম চাষিরা বলছেন, যেহেতু সাতক্ষীরা জেলার আম বিদেশেও রপ্তানি হয় সেহেতু একটু বাড়তি পরিচর্যা করতে হয়। বিষমুক্ত আম উৎপাদনে যথেষ্ট সচেতন জেলার আম চাষিরা। এ জেলার আমের সুনামও বাড়ছে পাশাপাশি চাষি ও চাষের পরিমাণও বাড়ছে। তালার উপজেলার আম চাষি অজিয়ার হোসেন জানান, কৃষি অফিসারদের পরামর্শে গাছে মুকুল আসার ১৫ থেকে ২০ দিন আগেই পুরো গাছ কীটনাশক দিয়ে ভালোভাবে স্প্রে করে ধুয়ে দিয়েছি। কেননা গাছে স্প্রে করলে গাছে বাস করা হপার বা শোষকজাতীয় পোকাসহ অন্যান্য পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এতে ফলনও ভাল পাওয়া যাবে। সদর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের আম ব্যবসায়ী সাইফুল্লা জানান, সাত লাখ টাকা দিয়ে তিনটি আম বাগান কিনেছি। এ বছর আমের মুকুলের ভাগ খুব ভাল। সুষ্ঠুভাবে আম সংগ্রহ করতে পারলে বেশি লাভের আশা যায়। সাতক্ষীরার আম এখন দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশি সুনাম বয়ে আনছে। দেশের আঞ্চলিক আবহাওয়ার ভিন্নতার কারণে সাতক্ষীরা জেলার পরিপক্ব আম একটু দ্রæত সংগ্রহ করা যায়। ফলে চাষিরা লাভবান হয়। নতুন ফল বাজারে সরবরাহের সাথে সাথে মানুষের একটু চাহিদাও বেশি থাকে। কৃষি অফিসের তথ্য মতে, জেলার কৃষি অফিসের তত্ত¡াবধানে দুটি জাত নেংড়া ও হিমসাগর সাতক্ষীরা থেকে বিদেশে যায়। ২০১৮-১৯ আর্থ বছরে ইতালি, সুইডেন, ডেনমার্ক ও ফ্রান্স এই চারটি দেশে মোট ২শ’ মেট্রিক টন আম রপ্তানি করে। আয় করে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এছাড়া জেলায় চাষকৃত উল্লেখযোগ্য আমের জাত হিমসাগর, আ, নেংড়া, গোপালভোগ, গোবিন্দভোগ, বোম্বাই, লতা, মল্লিকা, হাড়িভাঙ্গা, গোপালী ধোপা ও নিলাম্বরী জাতের আম উৎপাদন হয়। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক অরবিন্দ বিশ্বাস জানান, এ বছর আম গাছে ব্যাপক হারে মুকুল আসতে শুরু করেছে। পরিচর্যা ভাল হলে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে, চাষি ও ব্যবসায়ীরা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে। সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে। চলতি বছরে ৪১০০ হেক্টর জমি আম চাষের আওতায় আনা হয়েছে। আবহাওয়া অনুক‚লে থাকলে ৫০০০ মেট্রিক টন আম উৎপাদন আশা করা হচ্ছে। জেলার সাতটি উপজেলার সবচেয়ে বেশি সদরে ১২৩০ হেক্টর জমিতে ১০৪৫৫ মেট্রিক টন এবং সবচেয়ে কম আশাশুনি উপজেলায় ১৪০ হেক্টর জমিতে ৩৯১৫ মেট্রিক টন আম উৎপাদন আশা করছি। তাছাড়া আমের উৎপাদন বাড়াতে উপজেলা কৃষি অফিসগুলো চাষিদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছে। নিখুঁত এবং বিষমুক্ত আম উৎপাদনে সচেতনতার সাথে আমরা তৎপর আছি। সাতক্ষীরার আম বিদেশ রপ্তানি হয়। বিদেশে আরও নতুন মার্কেট খুঁজছে বাংলাদেশ। 8,476,071 total views, 799 views today |
|
|
|